ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর
WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF
ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF : ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ও অধ্যায় ভিত্তিতে প্রশ্নোত্তর নিচে দেওয়া হল। এবার পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় (WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF | West Bengal Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF | WBCHSE Board Class 11th Bengali Question and Answer with PDF file Download) এই প্রশ্নউত্তর ও সাজেশন খুব ইম্পর্টেন্ট। আপনারা যারা আগামী একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য বা একাদশ শ্রেণির বাংলা | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF | WBCHSE Board WB Class 11th Bengali Suggestion Question and Answer খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর ভালো করে পড়তে পারেন।
ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন/নোট (West Bengal Class 11th Bengali / WBCHSE Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF)
পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন (West Bengal Class 11th Bengali Suggestion PDF / Notes / Class 11 Bengali Chuti Question and Answer) ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর MCQ প্রশ্নোত্তর, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SAQ), সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (Short Question and Answer), ব্যাখ্যাধর্মী বা রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (descriptive question and answer) এবং PDF ফাইল ডাউনলোড লিঙ্ক নিচে দেওয়া রয়েছে।
ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer :
1. ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে ফটিকের মামির চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
Answer:
কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মামি আপাতভাবে এক নেতিবাচক চরিত্র। মূলত একমুখী এবং সরলরৈখিক চরিত্র হলেও ফটিকের মামির কিছু নিজস্ব স্বভাববৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
ফটিকের প্রতি বিরূপতা: ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু যেদিন প্রথম ফটিককে কলকাতায় তার বাড়িতে নিয়ে আসেন সেদিন থেকেই ফটিকের মামির মধ্যে ফটিকের প্রতি বিরূপতা লক্ষ করা যায়। স্বামীর কান্ডজ্ঞান নিয়েই তার মনে প্রশ্ন তৈরি হয়। ফটিক বুঝতে পারত যে, মামির চোখে সে একটা দুর্গহের মতো প্রতিভাত হচ্ছে। মামির দেওয়া কোনো কাজ ফটিক অতি উৎসাহে একটু বেশি করে ফেললে তিনি তাকে তিরস্কার করতেন এবং নিজের কাজে মন দিতে বলতেন। ফটিক বই হারিয়ে ফেললে তিনি রীতিমতো বিব্রত হন এবং ফটিককে তিরস্কার করে বলেন যে ‘মাসের মধ্যে পাঁচবার’ তিনি বই কিনে দিতে পারবেন না। ফটিকের মামির আচরণ ফটিককে শুধু ‘হীনতা এবং দৈন্য’-এ অবসন্ন করে তুলেছিল।
সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা: ফটিকের প্রতি তার মামির যে বিরূপতা তার অন্যতম কারণ ছিল তাঁর নিজের সংসারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা। নিজের তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর যে ‘ঘরকন্না’ সেখানে আর-একটি তেরো বছরের ‘অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে’ ছেলের উপস্থিতি তিনি মেনে নিতে পারেননি।
দায়িত্ববোধ: ফটিককে পছন্দ না করলেও ফটিকের মামির মধ্যে দায়িত্ববোধের অভাব ছিল না। সেই কারণেই দেখা যায় ফটিক যখন বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, সেই সময় সমস্ত দিন তিনি খাওয়া-দাওয়া করেননি এবং নিজের ছেলেদের সঙ্গেও অনেক খিটমিট করেছিলেন। নিজস্ব দায়িত্ববোধের কারণেই তার মধ্যে এই অস্থিরতা দেখা গিয়েছে। আধুনিককালের অণু পরিবারের আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতার প্রতীক হলেও ফটিকের মামির মধ্যে স্বভাবগত স্বাতন্ত্র্য এভাবেই স্পষ্ট হয়েছে।
2. ফটিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
Answer:
কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিক কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাকে কেন্দ্র করেই কাহিনির বিকাশ, বিস্তার এবং উপসংহার। সেই বিন্যাস থেকে চরিত্রটির বেশ কিছু ঝোঁক বা প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
শিশুসুলভ চপলতা: কাহিনির শুরুতে বালকদের মধ্যে ফটিককে পাওয়া যায় নেতার ভূমিকায়। প্রকাণ্ড শালকাঠের গুঁড়ি গড়িয়ে খেলা কিংবা ছোটোভাই মাখন গুঁড়ির ওপরে বসলে সেই সুদ্ধ গড়িয়ে দেওয়া, এই সমস্ত পরিকল্পনাই ফটিক করে, বাকিরা শুধু তা অনুমোদন এবং কার্যকর করে। ফটিকের মা ফটিকের এই দুরন্তপনাকে ‘অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
শিকড়ের প্রতি টান: প্রাথমিকভাবে ফটিক তার মামার সঙ্গে কলকাতায় যাওয়ার বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিল, কিন্তু সেখানকার বদ্ধজীবনে অতি দ্রুত সে তার আকর্ষণ হারায়। প্রকাণ্ড একটা ঘুড়ি নিয়ে ছুটে বেড়ানো গ্রামের সেই মাঠ, মনের আনন্দে নৃত্যপর হয়ে ঘুরে বেড়ানোর সেই নদীতীর, যখন-তখন ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, আর তার সঙ্গীসাথিদের নিয়ে স্বাধীনতার উদ্যাপন-এইসব পুরোনো স্মৃতি তার মনখারাপের জন্ম দেয়।
বিবেকবোধ: ফটিককে ‘নির্বোধ ও অমনোযোগী’ হিসেবে ভাবা হলেও ফটিকের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের যথেষ্ট প্রকাশ ঘটেছে। স্কুলে বই হারিয়ে ফেলার পরে যখন মামি তাকে তিরস্কার করেন, তখন পরের পয়সা নষ্ট করছে, এই অনুভবে ফটিকের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘হীনতা এবং দৈন্য’-এর অনুভব তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বিবেকবোধ থেকেই অসুস্থ ফটিক মামির কাছে ‘অনাবশ্যক জ্বালাতন’ হতে চায় না বলে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।
মা-এর প্রতি টান: ফটিক মনের আনন্দে কলকাতায় মামার বাড়িতে এলেও এবং তার মা তাকে বিদায় দিতে আপত্তি না করলেও কলকাতায় অবস্থানকালে মার সঙ্গে বিচ্ছেদে সে কাতর হয়ে পড়ে। অব্যক্ত কান্না ‘সেই লজ্জিত শঙ্কিত শীর্ণ দীর্ঘ অসুন্দর বালক’- এর মনকে কেবলই আলোড়িত করত। অসুস্থ হওয়ার পরে মায়ের সেবা-ই ফটিকের কাছে একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত মনে হয়। মা-র কাছে যাওয়ার জন্যই সে কাউকে না বলে মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
শেষকথা: শহরজীবনে একলা বিচ্ছিন্ন ফটিক তার মামার কাছে ছুটির সন্ধান করেছিল। কাহিনির শেষে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে অনন্ত ছুটির দেশের সন্ধান পেয়েছে।
3. ‘ছুটি’ গল্পের কাহিনিতে বিশ্বম্ভরবাবুকে যে ভূমিকায় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো।
Answer:
কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে বিশ্বম্ভরবাবু ছিলেন ফটিকের মামা। কাহিনিতে তাঁর সক্রিয়তা খুব বেশি না থাকলেও বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রটি কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার নিদর্শন: পশ্চিমের কাজ থেকে বহুকাল পরে দেশে ফিরে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর ‘বিদেশি নৌকা’ করে এসেছিলেন ফটিকের মা অর্থাৎ তাঁর বোনকে দেখতে। এই ঘটনায় গল্পের কাহিনি নতুন খাতে প্রবাহিত হয়, কারণ ফটিকের মার কাছে ফটিকের উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ ইত্যাদির কথা শুনে তিনি তাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা করানোর প্রস্তাব দেন। এই সিদ্ধান্তের জন্য নিজের স্ত্রীর গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। কিন্তু বিশ্বম্ভরবাবুর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বিধবা বোন ও ভাগিনেয়-র প্রতি তাঁর দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার নিদর্শন।
স্নেহপরায়ণ: পরবর্তীতে বিশ্বম্ভরবাবুর এই স্নেহপরায়ণতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে যখন অসুস্থ ফটিক কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় সেই সময়ে। ফটিককে উদ্ধারের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ যখন ফটিককে উদ্ধার করে আনে তখন বিশ্বম্ভরবাবুকে দেখা যায় প্রায় কোলে করে ফটিককে অন্তঃপুরে নিয়ে যেতে। এই ঘটনাতেও তাঁকে নিজের স্ত্রীর গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হয়। ফটিকের অসুস্থতা যখন বেড়ে উঠেছে, তার মায়ের অনুপস্থিতিতে বিশ্বম্ভরবাবুই ফটিকের কাছে বসে তার শীর্ণ তপ্ত হাত নিজের হাতের ওপর তুলে নিয়েছেন। দিন কেটে গিয়েছে, কিন্তু ফটিকের রোগশয্যার পাশে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর বোন আসা পর্যন্ত বসে থেকেছেন।
শেষকথা: সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে উদারতা, স্নেহপরায়ণতা ও সন্তানবাৎসল্যের যে নিদর্শন বিশ্বম্ভরবাবু দেখিয়েছেন তা তার চরিত্রকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে।হয় অতিরিক্ত স্নেহকাতরতা। যদিও তা তার কাছে অতি দুর্লভ বস্তু। তার চেহারা এবং ভাব “অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।” এই সংকটই গভীরভাবে ঘনিয়ে এসেছিল ফটিকের জীবনে। তার মামি তেরো বছরের এই অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলেটির উপস্থিতি একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁর স্নেহহীন চোখে ফটিক যেন এক ‘দুগ্রহের মতো’ উপস্থিত হয়েছিল এবং ফটিক তা নিজেও বুঝতে পারত। স্নেহকাতর ফটিক তাই তার মায়ের জন্য আকুল হয়ে উঠত এবং সম্ভবত এই বিরূপ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই সে ‘ছুটি’র সন্ধান করেছিল। এ হল বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত এক কিশোরের নিজেকে আলাদা করে নেওয়ার আকুলতা, মনস্তাত্ত্বিক সংকটে নিজের মতো করে সমাধান খুঁজতে চাওয়া।
4. ‘ছুটি’ গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিককে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু যখন কলকাতায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যেতে চান, ফটিক সাগ্রহে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল এবং কবে, কখন সেখানে যেতে পারবে তা জানতে চেয়ে মামাকে অস্থির করে তুলেছিল। অতি উৎসাহে সে বিনিদ্র রজনী যাপনও করেছিল। কিন্তু মামার বাড়িতে তার অভ্যর্থনা প্রত্যাশিত হয়নি। তার মামি এই ‘অনাবশ্যক পরিবার বৃদ্ধি’-তে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কারণ নিজের তিনটি ছেলেকে নিয়ে তাঁর যে ব্যস্ততার সংসার সেখানে তেরো বছরের অপরিচিত পাড়াগেঁয়ে ফটিককে তিনি ‘বিপদের সম্ভাবনা’ বলে মনে করেছিলেন। সেই মামির স্নেহহীন চোখে ফটিক ‘একটা দুর্গ্রহের মতো’ প্রতিভাত হচ্ছিল এবং মামি তাকে কোনো কাজ করতে বললে তাঁকে খুশি করতে সে মনের আনন্দে যতটা আবশ্যক তার থেকে বেশি কাজ করে ফেলত এবং তাতে মামি আরও বিব্রত হতেন। তিনি ফটিককে পড়াশোনায় মন দিতে বললে, তার মানসিক উন্নতির প্রতি মামির এই যত্ন ফটিকের কাছে ছিল ‘নিষ্ঠুর অবিচার’। স্কুলেও ফটিক ছিল সকলের চোখে নির্বোধ এবং অমনোযোগী। মাস্টারমশাই ফটিককে এতটাই মারধোর ও অপমান করতেন এবং তার এতটাই দুরবস্থা হত যে মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করত। এরমধ্যে বই হারিয়ে ফেলায় তাকে আরও অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে হয়। মামি সেকথা শুনে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারিনে।” ফটিক এই অনাদর, উপেক্ষা স্পষ্টই বুঝতে পারত। যে কারণে তার জ্বর এলেও সে মনে করেছিল মামি এটাকে ‘অনর্থক উপদ্রব’ এবং ‘অনাবশ্যক জ্বালাতন’ হিসেবে দেখবে। ঠিক এই কারণেই সে মামার বাড়ি ত্যাগ করে। কিন্তু পুলিশের সাহায্য নিয়ে যখন তাকে ফিরিয়ে আনা হয় তখন ফটিকের দুরবস্থা আরও বেড়ে যায়। অসুস্থ ফটিককে দেখে তার মামি ‘পরের ছেলেকে’ বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেন। এভাবেই মামার বাড়িতে অপমান আর অনাদরে দিন অতিবাহিত করতে হয়েছিল ফটিককে, যেখান থেকে সে হয়তো মুক্তি পেয়েছিল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
5. ‘ছুটি’ গল্পে কিশোর-মনস্তত্বের যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পটি কিশোর মনস্তত্ত্বের এক অসামান্য প্রকাশ। তেরো বছরের এক কিশোরের স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা নিয়ে এই গল্পের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। প্রত্যাশিতভাবেই অভিভাবকদের কড়া শাসনের মুখোমুখি হতে হয় এই বয়সে। ফটিকের ক্ষেত্রেও তার মা ছোটো ছেলে মাখন-এর থেকে ফটিককে শাসন করেছিলেন অনেক বেশি। কিন্তু ফটিকের কিশোর বয়স এবং মন প্রকৃত সংকটের মুখোমুখি হয় তার মামার বাড়িতে গিয়ে। ফটিক চরিত্রকে সামনে রেখে রবীন্দ্রনাথ এই বয়সের সমস্যা ও সংকটের ছবিকে তুলে ধরেছেন অসাধারণভাবে। তেরো-চোদ্দো বছরের ছেলে পৃথিবীতে এক ‘বালাই’ হিসেবে উপস্থিত হয়, যার কোনো শোভা নেই এবং যে কোনো কাজে লাগে না, যাকে দেখে কোনো স্নেহের উদ্রেক হয় না এবং যার সঙ্গসুখ কেউ বিশেষভাবে প্রার্থনা করে না। এই বয়সের কিশোরের মুখে “আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা”। তার চেহারা বেমানানভাবে বেড়ে ওঠে এবং কাপড়-চোপড় ছোটো হয়ে গেলে, লোকে ‘কুশ্রী স্পর্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করে। লালিত্য যেমন হারিয়ে যায়, সেরকমই কণ্ঠস্বরের মিষ্টতাও অদৃশ্য হয়ে যায়। এর জন্য চারপাশের মানুষজন তাকে অপছন্দ করতে থাকে। লেখকের দৃষ্টিকোণ থেকে শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মানুষজন মাফ করে দিতে পারে, “কিন্তু এই সময়ে কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্যবোধ হয়।” এই বয়সের কিশোর নিজেও মনে করে পৃথিবীর কোথাও সে ঠিকমতো খাপ খাচ্ছে না, তাই নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সে সবসময় লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে থাকে। আর একারণেই তার মধ্যে তৈরি হয় অতিরিক্ত স্নেহকাতরতা। যদিও তা তার কাছে অতি দুর্লভ বস্তু। তার চেহারা এবং ভাব “অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।” এই সংকটই গভীরভাবে ঘনিয়ে এসেছিল ফটিকের জীবনে। তার মামি তেরো বছরের এই অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলেটির উপস্থিতি একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁর স্নেহহীন চোখে ফটিক যেন এক ‘দুগ্রহের মতো’ উপস্থিত হয়েছিল এবং ফটিক তা নিজেও বুঝতে পারত। স্নেহকাতর ফটিক তাই তার মায়ের জন্য আকুল হয়ে উঠত এবং সম্ভবত এই বিরূপ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই সে ‘ছুটি’র সন্ধান করেছিল। এ হল বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত এক কিশোরের নিজেকে আলাদা করে নেওয়ার আকুলতা, মনস্তাত্ত্বিক সংকটে নিজের মতো করে সমাধান খুঁজতে চাওয়া।
6. “দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।”-কার কথা বলা হয়েছে? ‘দেয়ালের মধ্যে আটকে পড়া’ কথাটির তাৎপর্য কী? তার যা যা মনে পড়ত সেগুলি নিজের ভাষায় লেখো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের উল্লিখিত অংশে মুখ্য চরিত্র ফটিকের কথা বলা হয়েছে।
কলকাতায় মামার বাড়িতে এসে ফটিক তার মুক্ত গ্রামজীবনের থেকে বিচ্ছেদ যন্ত্রণা অনুভব করেছে। সেখানে তার জীবন স্কুল আর বাড়ির গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরের পৃথিবীতে যখন হাত ছাড়ার কোনো সুযোগ ছিল না তখন বাড়ির ভেতরটাও তার জন্য ছিল প্রতিকূল। সেখানে মামির কাছে ফটিক ছিল অবাঞ্ছিত। প্রথম থেকেই নিজের সংসারে অতিরিক্ত একজনের উপস্থিতি মামি মেনে নিতে পারেননি। ফটিক তার কাছে ‘বালাই’ হয়ে উঠেছিল। এমনকি মামি কোনো কাজ দিলে উৎসাহের সঙ্গে ফটিক যদি কিছুটা বেশি কাজ করে দিত, তাহলেও তাকে তিরস্কৃত হতে হত। এই অনাদর এবং উপেক্ষার কারণে চারপাশের দেয়াল যেন দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছিল ফটিকের কাছে।
ফেলে আসা গ্রামজীবন বার বার ফটিককে যেন ইশারা করত। প্রকাণ্ড ঘুড়ি নিয়ে উড়ে বেড়ানোর সেই মাঠ, নিজস্ব ছন্দে নৃত্যপর হয়ে আপন মনে গান গেয়ে বেড়ানোর সেই নদীতীর, দিনের মধ্যে যখন-তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, প্রিয় বালকদল, অবাধ স্বাধীনতা এবং সকলের ওপরে তার ‘অত্যাচারিণী অবিচারিণী মা’ প্রতিটা মুহূর্ত অসহায় ফটিকের মনকে আকর্ষণ করত।
7. “দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।”-কে, কখন এ কথা বলেছে? এই মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন ফটিকের মামি। জ্বরে আক্রান্ত ফটিক উপলব্ধি করেছিল যে অসুস্থ হলে সে মামির কাছে অনাবশ্যক উপদ্রব হয়ে দেখা দেবে। তাই সেই রাত্রেই ফটিক নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরে পুলিশের সাহায্যে বিশ্বম্ভরবাবু ফটিকের সন্ধান পান। অবিরাম বৃষ্টির মধ্যেই ফটিককে যখন পুলিশের লোকদের সাহায্যে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখন সে আপাদমস্তক ভেজা, সর্বাঙ্গে কাদা, চোখ রক্তবর্ণ এবং থরথর করে কাঁপছে। সেই সময়েই তাকে দেখে ফটিকের মামি উল্লিখিত মন্তব্যটি করেন।
ফটিকের মামির এই মন্তব্যের কারণ প্রাথমিকভাবে তিনি ফটিককে অপছন্দ করতেন। সেই কারণে ‘পরের ছেলেকে’ নিয়ে এই কর্মভোগ তিনি সহ্য করতে পারেননি। কিন্তু তা ছাড়াও ফটিককে নিয়ে তিনি সারাদিন দুশ্চিন্তা করেছিলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেননি। এমনকি নিজের ছেলেদেরকেও বকাঝকা করেছিলেন। সেই মানসিক দুশ্চিন্তা থেকেও ফটিকের মামি উল্লিখিত মন্তব্যটি করে থাকতে পারেন।
8. ছোটোগল্প হিসেবে ‘ছুটি’ গল্পের সার্থকতা আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ ছোটোগল্পটি তাঁর সামগ্রিক ছোটোগল্পের ধারায় এক অনবদ্য সৃষ্টি। ঘটনার আকস্মিকতা দিয়ে গল্পের সূচনা।- “বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল…।” গল্পের সমাপ্তিতেও থেকে যায় এক অতৃপ্তি। ফটিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এক অনন্ত ছুটির দেশে যাত্রা করে। স্তব্ধ পারিপার্শ্বিকে থেকে যায় ‘বালাই’ বলে বিবেচিত হওয়া কিশোর বয়সের অসমাধেয় সমস্যা, ছুটিতে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ফটিকের অপূর্ণ ইচ্ছা।
ফটিককে কেন্দ্রে রেখে কাহিনিবিন্যাস ঘটানো হয়েছে। ফটিকের বাড়ি আর তার মামার বাড়ির মধ্যে কাহিনি সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাড়ি থেকে মামার বাড়িতে যাওয়ায় ফটিকের আগ্রহ যদি প্রথম অংশের অভিমুখ হয়, তাহলে দ্বিতীয় অংশে আছে বাড়িতে ফেরার আকুলতা। কেন্দ্রাতিগ আর কেন্দ্রমুখী দুটি ধারাকে রবীন্দ্রনাথ মিলিয়েছেন ফটিক চরিত্রকে আশ্রয় করে।
ফটিক ছাড়া গোটা কাহিনি জুড়ে আর কোনো চরিত্র নেই। মাখন, ফটিকের মা, মামা, মামি ইত্যাদি চরিত্রগুলি প্রয়োজনসাপেক্ষে এসেছে কাহিনির ক্ষণপরিসরে। জ্বরের ঘোরে জল মাপতে মাপতে ফটিকের মৃত্যুর মহাদেশে অনন্ত ছুটিতে চলে যাওয়া যে করুণ আবহ তৈরি করে, তা গল্পকে অসামান্য পরিণতি দেয়। ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘অতিকথন’, ‘বহুচরিত্রের সমাবেশ’, ‘তত্ত্ব’ বা ‘উপদেশ’ বাদ দিয়ে ‘ছুটি’ ছোটোগল্প হিসেবে এক অসামান্য শিল্পসিদ্ধি লাভ করেছে।
9. “তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল”-কোন্ প্রস্তাবে বালকেরা কেন অনুমোদন করেছিল? সেই প্রস্তাব কার্যকরী করার পথে কোন্ বাধা উপস্থিত হয়েছিল?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের উল্লিখিত অংশে নদীর ধারে পড়ে থাকা একটা প্রকাণ্ড শালকাঠের গুঁড়িকে খেলাচ্ছলে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ফটিক-প্রদত্ত প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। বালকদল তাদের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর দেওয়া প্রস্তাবকে মেনে নিয়েছিল। শালকাঠের টুকরোটি মাস্তুলে রূপান্তর করার জন্য নদীর ধারে রাখা ছিল। বালকদল ভেবেছিল, ব্যক্তি প্রয়োজনের সময় কাঠটা খুঁজে না পেয়ে বিস্মিত এবং বিরক্ত হবে, তার অসুবিধা হবে-এই উপলব্ধি থেকেই তারা ফটিকের প্রস্তাব সোৎসাহে মেনে নিয়েছিল।
সকলে যখন কোমর বেঁধে কাঠের টুকরোটি গড়ানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে, সেই সময় ফটিকের ছোটো ভাই মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই শালকাঠের গুঁড়ির ওপরে গিয়ে বসে। খেলার প্রতি মাখনের এই ঔদাসীন্য দেখে বালকের দল বিমর্ষ হয়ে যায়। কয়েকজন তাকে সামান্য ঠেললেও সে বিচলিত হয় না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, “এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকল প্রকার ক্রীড়ার অসাড়তা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা” করছে। ফটিক এসে আস্ফালন করলেও এবং তাকে মারার ভয় দেখালেও মাখনলাল সেই জায়গা ছেড়ে ওঠেনি। এভাবেই বালকদের খেলার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হয়েছিল।
10. “কারণ, পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে,”-মন্তব্যটির প্রসঙ্গ আলোচনা করো। ‘পূর্বাপেক্ষা ভালো’ খেলাটি কী ছিল এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে মাখনলাল যখন ফটিকদের শালের গুঁড়ি গড়িয়ে দেওয়ার খেলায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং গুঁড়িটার ওপর উঠে বসে, তখন দলনেতা হিসেবে ফটিকের উচিত ছিল ভাইয়ের গালে একটি চড় কষিয়ে দেওয়া; কিন্তু সেটি সেই মুহূর্তে সে করতে পারেনি। তবে মুখে ফটিক এমন একটা ভাব দেখায় যে, ইচ্ছা করলেই সে মাখনলালকে রীতিমতো শাসন করে দিতে পারে। কিন্তু সেই শাসন করা থেকে সে বিরত থাকে, কারণ ততক্ষণে অনেক একটা ভালো খেলার পরিকল্পনা মাথায় চলে এসেছে, যাতে আরও মজা আছে। এই প্রসঙ্গেই প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি করা হয়েছে।
মাখনকে সুদ্ধ শালকাঠের গুঁড়িটিকে গড়ানো শুরু করা হবে- পূর্বাপেক্ষা এই ভালো খেলাটি ফটিক প্রস্তাব করেছিল।
শালকাঠের গুঁড়ির ওপরে দৃঢ়ভাবে বসে থাকা মাখনলাল মনে করেছিল যে তাকে সুদ্ধ গুঁড়িটা গড়িয়ে দিলে তার গৌরব বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু তাতে যে বিপদের সম্ভাবনা ছিল সেটা মাখনলাল কিংবা ছেলের দলের অন্য সদস্যরা অনুমান করতে পারেনি। ছেলেরা যখনই কোমর বেঁধে শালের গুঁড়িটি ঠেলতে আরম্ভ করে তখনই সেটি এক পাক ঘোরার সঙ্গে সঙ্গেই মাখনলাল ‘তাহার গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান সমেত’ মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় অন্যান্য ছেলেরা আনন্দ পেলেও ফটিক শঙ্কিত এবং শশব্যস্ত হয়ে ওঠে। অতঃপর মাখনলাল মাটি থেকে উঠে ফটিককে মারতে থাকে এবং তার নাকে- মুখে আঁচড় কেটে দেয়। তারপর সে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির দিকে চলে যায়, ফটিকদের খেলাও ভেঙে যায়।
11. “এই অকাল তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকল প্রকার ক্রীড়ার অসাড়তা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।”-কার কথা বলা হয়েছে? কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করা হয়েছে? এই মন্তব্যের কারণ কী?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ফটিকের ছোটোভাই মাখনলালের কথা বলা হয়েছে।
ফটিকের পরিকল্পনা মতো বালকদলের অন্য সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, নদীর ধারে মাস্তুল বানানোর জন্য যে প্রকাণ্ড শালকাঠের গুঁড়িটি কেউ রেখেছিল, সেটিকে গড়িয়ে নিয়ে যাবে। এতে যে ব্যক্তির কাঠ, প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁর বিস্ময়, বিরক্তি ও অসুবিধা হবে ভেবে সকলেই উৎসাহিত হয়ে ওঠে। যখন সকলে মহা-উৎসাহে কাজে উদ্যোগী হতে চলেছে তখনই মাখনলাল ছেলেদের বিমর্ষ করে সেই গুঁড়ির ওপরে উঠে বসে। সেই সময় তার মুখের অভিব্যক্তি এবং মনোভঙ্গি প্রসঙ্গেই লেখক উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।
মাখনলালের মুখের গাম্ভীর্য তার বয়সোচিত ছিল না। অন্য ছেলেরা যখন তাদের উদ্ভট খেলা নিয়ে অকারণ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে চাইছিল তখন মাখনলালকে দেখা গিয়েছিল যে, এই বিষয়ে সে সম্পূর্ণ উদাসীন। এমনকি একজন এসে তাকে ভয়ে ভয়ে একটু ঠেললেও সে বিচলিত হয় না। তার এই মনোভঙ্গির কারণেই তাকে ‘অকাল তত্ত্বজ্ঞানী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যে কিনা সমস্তরকম খেলাধুলার অসারতা নিয়ে চিন্তা করছিল।
12. “…তাহা তাহার কিংবা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই।”-কার বা কাদের কথা বলা হয়েছে? কী মনে না হওয়ার কথা বলা হয়েছে? ঘটনাটি উল্লেখ করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ফটিকের ছোটোভাই মাখনলাল এবং ফটিকের নেতৃত্বে খেলায় উদ্যোগী বালকদলের সদস্যদের কথা বলা হয়েছে।
সমস্ত পার্থিব গৌরবের সঙ্গে বিপদের সম্ভাবনা যুক্ত হয়ে থাকে। শালকাঠের গুঁড়ির ওপরে উঠে বসে মাখনলাল বালকদের খেলায় যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে চেয়েছিল তা তার মধ্যে এক গৌরবের বোধ জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু এর ফলে কী অনর্থ হতে পারে তা মাখনলাল কিংবা গুঁড়ি গড়াতে উদ্যত বালকের দল কেউই ভাবতে পারেনি।
ফটিকের পরিকল্পনা মতো বালকদলের সদস্যরা তাদের খেলার অঙ্গ হিসেবে নদীর ধারে মাস্তুল বানানোর জন্য রাখা শালকাঠের গুঁড়িটি গড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইলে মাখনলাল বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং গুঁড়ির ওপরে চেপে বসে। ফটিক তাকে মার খাওয়ার ভয় দেখিয়েও নিবৃত্ত করতে পারে না। বরং “আরো একটু নড়িয়া-চড়িয়া আসনটি স্থায়ীরূপে দখল করিয়া লইল।” এই পরিস্থিতিতে ফটিক তাকে না মেরে ‘পূর্বাপেক্ষা আর একটা ভালো খেলা’র পরিকল্পনা করে। সে প্রস্তাব দেয়, মাখনকে সুদ্ধ গুঁড়িটি গড়িয়ে দেওয়ার। মাখন মনে করেছিল যে, এতে তার গৌরব আছে। কিন্তু এর বিপদের দিকটা মাখনলাল বা ফটিকের দলের সদস্যরা কেউই উপলব্ধি করতে পারেনি।
13. নদীর ধারে বালকদলের খেলার দৃশ্যটি নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে নদীর ধারে বালকদলের খেলার দুটি দৃশ্য তৈরি হয়েছিল। ফটিক ছিল সেই দলের নেতা এবং দুটি ক্ষেত্রেই পরিকল্পনা ছিল তারই। দলের অন্য সদস্যরা সেই পরিকল্পনা অনুমোদন এবং কার্যকরী করেছিল মাত্র।
দৃশ্য: ১- নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাঠের গুঁড়ি কেউ রেখে দিয়েছিল মাস্তুল তৈরি করার জন্য। ফটিক পরিকল্পনা করে যে, সেটিকে সকলে মিলে গড়িয়ে নিয়ে যাবে। যার কাঠ প্রয়োজনের মুহূর্তে সে অত্যন্ত বিস্মিত, বিরক্ত ও অসুবিধাবোধ করবে-এই উপলব্ধি থেকে বালকেরা সেই প্রস্তাব সম্পূর্ণ অনুমোদন করে এবং সকলে মিলে মনোযোগের সঙ্গে সেই কাজে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু ফটিকের ছোটোভাই মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির ওপরে গিয়ে বসায় ছেলেদের সেই প্রাথমিক উদ্যম আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কয়েকজন এসে তাকে একটু ঠ্যালার চেষ্টা করে, কিন্তু তাতেও সে বিচলিত হয় না। ফটিক এসে ভাইয়ের প্রতি আস্ফালন করে কিন্তু মাখনলাল নিজের অবস্থানে অনড় থাকে, বরং আসনটি যেন স্থায়ীভাবে দখল করে নেয়।
দৃশ্য: ২- মাখনের অনড় মনোভাব দেখে ফটিকের মনে নতুন একটা পরিকল্পনা আসে। তার মনে হয় যে, সেটি আগের থেকে আরও একটি ‘ভালো খেলা’ হতে পারে, কারণ তাতে ‘আরেকটু বেশি মজা আছে’। সে প্রস্তাব করে যে, মাখনকে সুদ্ধ কাঠের গুঁড়িটি গড়িয়ে দিতে হবে। মাখন মনে করে যে, তাতে তার গৌরব আছে। কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের মতোই তাতেও যে কিছু বিপদের সম্ভাবনা আছে তা সে ভাবতে পারেনি। মাখন তার সমস্ত ‘গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান-সমেত’ মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। খেলার শুরুতেই এই আশাতীত ফল লাভ করে অন্যান্য বালকেরা অত্যন্ত আনন্দিত হলেও ফটিক এই বিপর্যয়ে শশব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে মাখন মাটি থেকে উঠে দাদার প্রতি তীব্র রাগ প্রকাশ করে এবং তার নাকে-মুখে আঁচড় কেটে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে চলে যায়। বালকদের খেলাও ভেঙে যায়।
14. “গুঁড়ি এক পাক ঘুরিতে-না-ঘুরিতেই মাখন তাহার গাম্ভীর্য, গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান-সমেত ভূমিসাৎ হইয়া গেল।”- ঘটনাটি উল্লেখ করো এবং ফটিকের ওপরে এর কী প্রভাব পড়েছিল লেখো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের নেতৃত্বে বালকদল নদীর ধারে থাকা একটা শালের গুঁড়ি গড়িয়ে দেওয়ার খেলায় মেতেছিল। কিন্তু ফটিকের ছোটোভাই মাখনলাল সে খেলার পথের বাধা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ সে সেই গুঁড়ির ওপরে গিয়ে বসে এবং কোনোভাবেই তাকে গুঁড়ি থেকে নামানো যায় না। সেই কাজে ব্যর্থ হয়ে অতঃপর তাদের মনে নতুন একটা খেলার পরিকল্পনা আসে এবং তারা ঠিক করে নাছোড় মাখনলালকে সুদ্ধ শালকাঠের গুঁড়িটিকে গড়িয়ে দেবে। মাখনলাল মনে করে যে, এতে তার গৌরব বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই ঘটনার পরিণতি কী হতে পারে তা মাখনলাল কিংবা দলের অন্য সদস্যরা কেউই অনুমান করতে পারেনি। গুঁড়ি এক পাক ঘোরার সঙ্গে সঙ্গেই মাখনলাল মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার দিকেই এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
মাখনলাল কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে চলে যাওয়ার পর ফটিকদের খেলা ভেঙে যায়। ফটিক একটা নৌকার গলুই-এর ওপরে বসে কাশের গোড়া চিবোতে থাকে। কিছু সময় পরে বাঘা বাদি এসে ফটিককে জানায় যে, তার মা তাকে ডাকছে। ফটিক যেতে না চাইলে বাঘা তাকে আড়কোলা করে তুলে নিয়ে যায়। ফটিককে দেখামাত্রই তার মা জানতে চান সে মাখনকে মেরেছে কি না। ফটিক অস্বীকার করলেও তার মা তার কথা বিশ্বাস করেন না। অন্যদিকে মাখন জানায় যে, ফটিক তাকে মেরেছে। ফটিক এই মিথ্যাচার সহ্য করতে না পেরে মাখনকে ‘এক সশব্দ চড়’ কষিয়ে দেয়। ফটিকের এই আচরণ সহ্য করতে না পেরে তার মা ফটিককে পালটা দু-তিনবার চড় মারেন, ফটিকও এইসময় তার মাকে ঠেলে দেয়। ফটিকের মা এই আচরণের প্রতিক্রিয়ায় যখন চিৎকার করছেন, সেই সময়েই তাদের বাড়িতে ফটিকের মামার প্রবেশ ঘটে এবং অশান্তিপূর্ণ ঘটনাটির আপাত-উপসংহার ঘটে।
15. “এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন…”-‘কাঁচাপাকা বাবুটি’ কে ছিলেন? ‘সেই’ শব্দটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? তিনি কখন ঘরে ঢুকেছিলেন?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে উল্লিখিত ‘কাঁচাপাকা বাবুটি’ ছিলেন ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।
বিশ্বম্ভরবাবু যখন নৌকা থেকে নামেন তখন ফটিক একটি নৌকার গলুই-এর ওপরে বসে কাশের গোড়া চিবাচ্ছিল। তিনি ফটিকের কাছেই প্রথম ‘চক্রবর্তীদের বাড়ি’র ঠিকানা জানতে চেয়েছিলেন এবং ফটিক তাকে এমন অদ্ভুতভাবে বাড়ির দিনির্দেশ করেছিল যে তা কারও বোঝার সাধ্য ছিল না। ‘সেই’ শব্দটির সাহায্যে ফটিকের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বম্ভরবাবুকে তার এই পূর্বদর্শনের অভিজ্ঞতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ফটিকের ভাই মাখনলালকে বালকদল গুঁড়িসুদ্ধ গড়িয়ে দেওয়ার পরে সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে এবং তার মার কাছে অভিযোগ করে যে ফটিক তাকে মেরেছে। অতঃপর ফটিকের মা বাঘা বান্দিকে দিয়ে ফটিককে জোর করে বাড়িতে নিয়ে আসেন, কিন্তু ফটিক মাখনকে মারার কথা অস্বীকার করে। ফটিকের মা যেহেতু ছোটো ছেলের প্রতি স্নেহশীলা ছিলেন সেহেতু তিনি ধারণা করেন যে, ফটিক মিথ্যে কথা বলছে। কিন্তু ফটিক জোরের সঙ্গে মারার কথা অস্বীকার করে এবং মাখনকে জিজ্ঞাসা করতে বলে। মাখন এই সময়ে তার পূর্বনালিশে অনড় থেকে বলে যে, ফটিক তাকে মেরেছে। এই মিথ্যাভাষণে ক্ষুদ্ধ হয়ে ফটিক মাখনকে এবার সত্যিই একটা সশব্দ চড় কষিয়ে দেয়। ফটিকের মা-ও ফটিককে পালটা দু-তিনটে চড় মারেন। এতে ফটিকের ক্রোধ আরও বেড়ে যায় এবং সে তার মাকে ঠেলে দেয়। ফটিকের মা চিৎকার করতে থাকেন। এইরকম এক পরিস্থিতিতেই তাদের ঘরে সেই ‘কাঁচাপাকা বাবু’ অর্থাৎ ফটিকের মামার আবির্ভাব ঘটে।
16. “বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।”-কে, কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং কখন? সেই প্রস্তাবে বাড়ির সকলের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে যে প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে সেটি ফটিকের মা-কে দিয়েছিলেন ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।
বহুদিন পশ্চিমে কাজ করার পর দেশে ফিরে বিশ্বম্ভরবাবু এসেছিলেন তাঁর বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্য। খুব সমারোহে কয়েক দিন কাটানোর পরে বিদায় নেওয়ার দু-একদিন আগে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর বোনের কাছে ছেলেদের পড়াশোনা এবং মানসিক উন্নতি বিষয়ে জানতে চান। ফটিকের মা ফটিকের অবাধ্যতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ ইত্যাদির অভিযোগ করেন; অন্যদিকে মাখনলালের শান্ত স্বভাব এবং পড়াশোনায় আগ্রহের প্রশংসা করেন। এ কথা শোনার পরেই বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রেখে লেখাপড়া শেখানোর প্রস্তাব দেন।
এই প্রস্তাবে ফটিকের মা সহজেই সম্মত হয়েছিলেন, কারণ ফটিকের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগের তালিকা দীর্ঘতর ছিল। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, ফটিক তাঁর ‘হাড় জ্বালাতন’ করে দিচ্ছে। ছোটো ছেলে মাখনলালকে ফটিক কখন কোন্ দুর্ঘটনার মধ্যে ফেলে দেয়, সেই আশঙ্কাও ফটিকের মায়ের ছিল। অন্যদিকে ফটিকও এই যাওয়ার প্রস্তাবে আনন্দের সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। অতি-আগ্রহী হয়ে সে তার মামাকে অস্থির করে তোলে। উৎসাহে রাতে তার ঘুম হয় না। ফটিকের যাওয়ার বিষয়ে তার মা-র পূর্ণসম্মতি থাকলেও ফটিকের অতি-উৎসাহ তাকে ‘ঈষৎ ক্ষুণ্ণ’ করে। যাওয়ার সময়ে আনন্দিত ফটিক উদারভাবে তার ছিপ, ঘুড়ি, লাটাই সমস্ত কিছুর সম্পূর্ণ অধিকার মাখনকে দিয়ে যায়।
17. “তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন।”-কে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন? তার এই ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ফটিকের মা-র ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ফটিকের পড়াশোনায় অমনোযোগ, অবাধ্যতা ইত্যাদির কারণে তার প্রতি তার মা বিশেষ প্রসন্ন ছিলেন না। বিশেষত ছোটোভাই মাখনের প্রতি ফটিকের আচরণ, অতিরিক্ত শাসনপ্রবণতা তার মাকে আরও বেশি করে ফটিকের প্রতি বিরূপ করে তুলেছিল। সেই কারণে তাঁর দাদা বিশ্বম্ভরবাবু যখন তাঁর কাছে ছেলেদের পড়াশোনা এবং মানসিক উন্নতি বিষয়ে জানতে চান, তখন মাখনের প্রশংসা করলেও ফটিকের মা ফটিকের উচ্ছৃঙ্খলতা এবং অমনোযোগিতা বিষয়ে অভিযোগ জানান। স্পষ্ট বলেন, ‘ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।” বিশ্বম্ভরবাবু সেইসময় ফটিককে কলকাতায় নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানোর কথা বললে, তিনি তাতে সহজেই সম্মতি দেন। ফটিকও এই প্রস্তাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। দিনক্ষণ জানতে চেয়ে সে মামাকে অস্থির করে তোলে, উৎসাহে তার রাত্রে ঘুম হয় না। যদিও ফটিকের মামার বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে তার মায়ের আপত্তি ছিল না। বরং মাখনের কথা ভেবে তিনি এই ঘটনায় কিছুটা নিশ্চিন্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু ফটিকের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত উৎসাহ তাঁকে ক্ষুণ্ণ করে। অধিকারবোধে আঘাত লাগার জন্যই ফটিকের মা-র মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।
- “… পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই।”-কাকে ‘বালাই’ বলা হয়েছে? লেখককে অনুসরণ করে এই মনোভাবটি বিশ্লেষণ করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে ফটিকের মামির ভাবনাসূত্রে লেখকের মনে হয়েছে যে তেরো-চোদ্দো বছরের ছেলে পৃথিবীতে একটা ‘বালাই’।
ফটিককে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় নিজের বাড়িতে নিয়ে এলে তাঁর স্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারে না। নিজের তিন ছেলের সঙ্গে অতিরিক্ত আর-একজনের দায়িত্ব নেওয়া কতটা ঝামেলার হতে পারে তা বিশ্বম্ভরবাবু বোঝেননি বলে তাঁর স্ত্রী তাঁর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গে লেখকের মনে হয়েছে যে, ফটিকের বয়স তার বিরুদ্ধে যায়। একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেলের কোনো শোভা নেই, আবার কোনো কাজেও লাগে না। তাকে দেখে স্নেহের উদ্রেক হয় না, আবার তার সঙ্গসুখও একেবারেই প্রার্থনীয় নয়। “তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা।” তার হঠাৎ বেড়ে ওঠার কারণে কাপড়- চোপড় ছোটো হয়ে যায় এবং সকলে সেটাকে একটা ‘কুশ্রী স্পর্ধা’ বলে মনে করে। শৈশবের সৌন্দর্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা হঠাৎ করে চলে যায় এবং তার জন্য সকলে সেই কৈশোরকেই দায়ী করে। শৈশব ও যৌবনের অনেক দোষ মাফ করে দেওয়া যায়, কিন্তু এই বয়সের কোনো স্বাভাবিক ত্রুটিকেও সকলের অসহ্য বলে মনে হয়।
19. “সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।”-কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? তার সম্পর্কে এই মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের প্রশ্নোবৃত অংশে তেরো-চোদ্দো বছরের ছেলে ফটিক, যাকে পৃথিবীতে সকলে ‘বালাই’ বলে মনে করে, তার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে।
ফটিক যখন তার মামা বিশ্বম্ভরবাবুর সঙ্গে তার বাড়িতে যায় তখন বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রী ফটিকের সেই আগমন মেনে নিতে পারেননি। নিজের তিন ছেলেকে নিয়ে নিজস্ব নিয়মে দিনযাপন করা বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রীর কাছে ফটিকের উপস্থিতি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। ফটিকের বয়সও তার গ্রহণযোগ্যতার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন যে, তেরো-চোদ্দো বছরের একটি কিশোর সংসারে অন্যদের কাছে খুব একটা গ্রহণীয় নয়। তার হঠাৎ বড়ো হয়ে ওঠা, কণ্ঠস্বর এবং কথাবার্তার ভঙ্গি পালটে যাওয়া ইত্যাদি কারণে অন্যরা সহজে তাকে গ্রহণ করতে পারে না।
এর বিপরীতে কৈশোর এবং যৌবনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছেলেটিরও মনে হয় যে, পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গেই সে ঠিক মানানসই হচ্ছে না। ফলে তার নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সে সর্বদা ‘লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী’ হয়ে থাকে। আবার এতদিন যে স্নেহ পেতে সে অভ্যস্ত ছিল, তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে; সেই স্নেহের জন্য তার মনের মধ্যে অতিরিক্ত কাতরতা জন্মায়। দুর্ভাগ্যবশত কেউ তাকে স্নেহ করতে সাহস করে না, কারণ সেটাকে অনেকেই প্রশ্রয় বলে মনে করে। এই কারণেই লেখক বলেছেন যে, তার ‘চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো’ হয়ে যায়।
20. “…এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর কোনো অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক।”- ফটিকের ক্ষেত্রে অবস্থাটি কেমন ছিল বর্ণনা দাও। সেই পরিস্থিতিতে ফটিকের কী মনে হয়েছিল উল্লেখ করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে কলকাতায় মামার বাড়িতে যাওয়ার পরে ফটিক তার মামির কাছ থেকে কোনো সমাদর পায়নি। বরং তিনি তাকে এক অনাকাঙ্ক্ষিত উপদ্রব বলে মনে করেছেন। “মামীর স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হইতেছে, এইটে ফটিকের সব চেয়ে বাজিত।” সেই কারণে মামি তাকে কখনও কোনো কাজ করতে বললে সে মনের আনন্দে প্রয়োজনের থেকেও বেশি কাজ করে ফেলত এবং তাতে প্রচণ্ড বিব্রত হয়ে মামি তাকে ভবিষ্যতে সেই কাজ থেকে বিরত হয়ে পড়াশোনায় মন দিতে বলতেন। মামির এই উপদেশ ফটিকের ‘নিষ্ঠুর অবিচার’ বলে মনে হত। আর এর সঙ্গেই ছিল চার দেয়ালের মধ্যে আটকে থাকা বন্দি জীবন, যেখানে হাঁফ ছাড়ারও পরিসর ছিল না।
ফটিকের মনে পড়ে যেত তার গ্রামের কথা। প্রকাণ্ড একটা ঘুড়ি নিয়ে ছুটে বেড়ানোর সেই মাঠ, মনের আনন্দে নৃত্যপর হয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই নদীতীর, তার ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, আর তার সঙ্গীসাথিরা, তাদের নিয়ে স্বাধীনতার উদ্যাপন এবং সকলের ওপরে তার মা-র কথা সেই অসহায়তার মুহূর্তে তার মনকে আকর্ষণ করত। মা-র কাছে যাওয়ার একটা অন্ধ ইচ্ছা, একটা অব্যক্ত ব্যাকুলতা ফটিকের মনকে প্রতি মুহূর্তে আলোড়িত করে তুলত।
21. “স্কুলে এতবড়ো নির্বোধ এবং অমনোযোগী বালক আর ছিল না।”-কার কথা বলা হয়েছে? তার সম্পর্কে এ কথা বলার কারণ কী ছিল আলোচনা করো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে ফটিকের কথা বলা হয়েছে।
ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে তাঁর কাছে কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন ভালো করে লেখাপড়া শেখানোর জন্য। কিন্তু ফটিকের দিক থেকে উপযুক্ত চেষ্টা বা প্রত্যাশিত সাফল্য কোনোটাই পাওয়া যাচ্ছিল না। কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর না দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত। মাস্টারমশাই মারতে আরম্ভ করলে ‘ভারক্লান্ত গর্দভের মতো’ নীরবে সহ্য করত। ছেলেদের যখন খেলার ছুটি হত, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফটিক দূরের বাড়ির ছাদ নিরীক্ষণ করত। সেই দুপুরবেলায় কোনো-একটি ছাদে দু-একজন ছেলেমেয়েকে খেলার উদ্দেশ্যে ক্ষণিকের জন্য দেখা গেলেই তার মন অস্থির হয়ে উঠত। অমনোযোগ, অন্যমনস্কতা এবং তার ফলে তৈরি হওয়া শিক্ষকের অসন্তোষ-এর আবহেই ফটিক একদিন স্কুলে তার বই হারিয়ে ফেলে। সে এমনিতেই পড়া তৈরি করতে পারত না, তার ওপরে বই হারিয়ে একেবারে চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে পড়ল। মাস্টারমশাই প্রতিদিন তাকে অত্যন্ত মারধর এবং অপমান করতে থাকেন। স্কুলে এমন অবস্থা হল যে, ফটিকের মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গে সম্বন্ধ স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করত এবং তার কোনো অপমানে তারা অন্যান্য বালকদের থেকেও অনেক বেশি আমোদ জোর করে প্রকাশ করত। এভাবে স্কুলের মাস্টারমশাই, অন্যান্য ছাত্র এবং তার মামাতো ভাইদের, সকলের কাছেই ফটিক এক ‘নির্বোধ এবং অমনোযোগী’ ছাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
22. “নিজের হীনতা এবং দৈন্য তাহাকে মাটির সহিত মিশাইয়া ফেলিল।”-কার কথা বলা হয়েছে? যে পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্যটি করা হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিকের কথা বলা হয়েছে।
ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে তাঁর কাছে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ভালো করে লেখাপড়া শেখানোর জন্য। কিন্তু একদিকে মামির কাছে অনাদৃত হওয়া, অন্যদিকে তার ফেলে আসা জীবনের জন্য মনখারাপের অনুভূতি-এইসব কারণ পড়াশোনার প্রতি ফটিককে উদাসীন করে রাখে। স্কুলে সে চিহ্নিত হয় ‘নির্বোধ এবং অমনোযোগী’ বালক হিসেবে। মাস্টারমশাইয়ের মার, অপমান ইত্যাদির আবহেই একদিন ফটিক স্কুলে তার বই হারিয়ে ফেলে। ফলে ‘অমনোযোগী’ ফটিকের পক্ষে পড়াশোনা করা একেবারে দুরূহ হয়ে ওঠে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যায় যে, ফটিকের মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গে সম্বন্ধ স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করতে থাকে এবং তার কোনো অপমানে তারা অন্যান্য বালকদের থেকেও অনেক বেশি আমোদ জোর করে প্রকাশ করতে থাকে। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠলে ফটিক একদিন তার মামির কাছে গিয়ে ‘নিতান্ত অপরাধীর মতো’ বই হারানোর কথা জানায়। মামি দৃশ্যতই যথেষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করে রূঢ়ভাবে বলেন যে, ‘মাসের মধ্যে পাঁচবার’ তার পক্ষে বই কিনে দেওয়া সম্ভব না। ফটিক আর-কিছু না বললেও ‘পরের পয়সা নষ্ট’ করার গ্লানি তার মনের মধ্যে চেপে বসে। মায়ের প্রতি তার তীব্র অভিমান হয় এবং তখনই নিজের ‘হীনতা এবং দৈন্য’ তাকে যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।
23. “এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জা বোধ হইল।”-কার কথা বলা হয়েছে? কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করা হয়েছে? উদ্দিষ্ট চরিত্রটি এই জন্য কী করেছিল?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিকের কথা বলা হয়েছে।
একদিন স্কুল থেকে ফিরে আসার পরে ফটিকের রাত্রিবেলায় মাথা ব্যথা শুরু হয় এবং শীতের অনুভূতি হতে থাকে। সে বুঝতে পারে যে তার জ্বর আসছে; সঙ্গে এটাও উপলব্ধি করতে পারে যে অসুস্থ হলে তার মামির প্রতি অত্যন্ত অনর্থক উপদ্রব করা হবে। মামির যে আচরণ ইতিপূর্বে সে প্রত্যক্ষ করেছে, তাতে ফটিক নিশ্চিত ছিল যে তার এই অসুখকে মামি এক অকারণ অনাবশ্যক জ্বালাতন হিসেবে দেখবে। অসুস্থতার সময় একমাত্র নিজের মা-ই উপযুক্ত সেবা পরিচর্যা করতে পারে, অন্য কারোর কাছে সে প্রত্যাশা অনুচিত। এই প্রসঙ্গেই ফটিকের মনে উল্লিখিত অনুভূতিটি হয়েছিল।
মামাকে সামান্যমাত্র অসুবিধার মধ্যে ফেলবে না বলেই পরদিন সকালে ফটিক অদৃশ্য হয়ে যায়। চারপাশে প্রতিবেশীদের বাড়িতে খোঁজ করে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। সেদিন রাত্রি থেকেই মুশলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। সুতরাং মানুষজন তার খোঁজ করতে গিয়ে যথেষ্ট নাকাল হয়। শেষপর্যন্ত কোথাও ফটিককে না পেয়ে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দেন। সন্ধের সময় চারপাশ যখন জলমগ্ন হয়ে গেছে তখন পুলিশের গাড়িতে করে ফটিক বাড়িতে ফেরত আসে। বলাবাহুল্য, এই সময় প্রত্যাশিতভাবেই মামার বাড়িতে মামির তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া ফটিকের জন্য অত্যন্ত বিরূপ হয়।
24. “পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না।”- ফটিককে পরদিন সকালবেলা কেন দেখা যায়নি? কীভাবে তার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিক তার মামার বাড়িতে মামির কাছে ছিল অপাঙ্ক্তেয়। নানা কারণে বারেবারে সেখানে তাকে তিরস্কৃত হতে হয়েছিল। এই কারণে একদিন স্কুল থেকে ফেরার পরে যখন তার মাথাব্যথা শুরু হয় এবং শীত করতে থাকে, আর সে বুঝতে পারে যে তার জ্বর আসছে। তখনই ফটিকের উপলব্ধি হয় যে, অসুস্থ হলে মামির প্রতি অনর্থক উপদ্রব করা হবে। মামি তার অসুস্থতাকে এক ‘অনাবশ্যক জ্বালাতন’ হিসেবে দেখবে-এটা সে স্পষ্ট বুঝতে পারে। অসুস্থতার সময়ে মা ছাড়া অন্য কারও কাছে কোনোরকম সেবা প্রত্যাশা করা যে উচিত নয় তা-ও ফটিক সহজেই বুঝতে পারে। এই সমস্ত কারণেই বাড়ির লোকদের বিড়ম্বিত না করার জন্যই সে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই পরদিন সকালবেলায় ফটিককে আর দেখা যায় না।
ফটিক নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর চারপাশে প্রতিবেশীদের বাড়িতে খোঁজ করা হয়, কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। রাত্রি থেকেই যেহেতু মুশলধারে বৃষ্টি পড়ছিল সেইকারণে সকলেই ফটিককে খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো ভিজে যায়। অবশেষে কোথাও তাকে না পেয়ে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দেন। সমস্ত দিনশেষে সন্ধের সময় বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় পুলিশের গাড়ি এবং অবিরাম বৃষ্টিতে এক হাঁটু জলের মধ্য দিয়ে দুজন পুলিশের লোক ফটিককে ধরে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর কাছে নিয়ে আসে।
25. “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”-কে, কাকে উদ্দেশ করে কথাটি বলেছে? ছুটির জন্য বক্তার এই আকুলতার কারণ কী ছিল? শেষপর্যন্ত বক্তা তার কাঙ্ক্ষিত ছুটি কীভাবে পেয়েছিল?
Answer: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক তার মা-কে উদ্দেশ করে বলেছে।
ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে কলকাতায় পড়াশোনার জন্য নিয়ে গেলেও একদিকে মামার বাড়িতে মামির অনাদর, অন্যদিকে শহরের বদ্ধ জীবন ফটিককে কখনোই পড়াশোনায় আকৃষ্ট করতে পারেনি। ফলে স্কুলে সে ‘নির্বোধ এবং অমনোযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। মাস্টারমশাই তাকে পড়া না পারার জন্য মারতেন, এমনকি তার মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গ এড়িয়ে চলা পছন্দ করত। ঘরে এবং বাইরে এত অনাদর এবং উপেক্ষার মধ্যে থাকতে থাকতেই ফটিকের মার কাছে যাওয়ার ইচ্ছা হত। তার মামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কার্তিক মাসে পুজোর ছুটির সময় সে বাড়ি যাবে। তখন থেকেই শুরু হয় ছুটির জন্য ফটিকের অধীর অপেক্ষা।
অসুস্থ হওয়ার পরে ফটিক নিজেই নিজের ছুটি করে নিতে চেয়েছিল, কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে। কিন্তু মামার উদ্যোগে পুলিশের গাড়ি তাকে ফিরিয়ে আনে। নশ্বর জীবনে যে ছুটি ফটিক চেয়েছিল সে তা পায়নি, কিন্তু মৃত্যু তাকে সেই ছুটির সুযোগ করে দিয়েছে। ছুটিতে সে তার মা-র কাছে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। সেই মা-কে পাশে রেখেই ফটিক যাত্রা করেছে অনন্ত ছুটির দেশে।
একাদশ শ্রেণীর সাজেশন – Class 11 Suggestion
আরোও দেখুন:-
Class 11 Bengali Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 English Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 Geography Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 History Suggestion Click Here
আরোও দেখুন:-
Class 11 All Subjects Suggestion Click Here
FILE INFO : WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF Download for FREE | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বিনামূল্যে ডাউনলোড করুণ | ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – MCQ প্রশ্নোত্তর, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর, ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নউত্তর
PDF Name : ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF
Price : FREE
Download Link : Click Here To Download
পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন উত্তর ও শেষ মুহূর্তের সাজেশন ডাউনলোড। একাদশ শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। West Bengal Class 11 Bengali Suggestion Download. WBCHSE Class 11 Bengali short question suggestion. WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF download. WB Class 11th Bengali suggestion and important questions. WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF.
Get the WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF by winexam.in
West Bengal WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF prepared by expert subject teachers. WB Class 11th Bengali Suggestion with 100% Common in the Examination.
Class 11th Bengali Chuti Suggestion
West Bengal Class 11th Bengali Chuti Suggestion Download. WBCHSE HS Bengali short question suggestion. WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF download. HS Question Paper Political science.
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11th Bengali Suggestion
একাদশ শ্রেণীর বাংলা ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রশ্ন উত্তর। একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রশ্ন উত্তর | WB Class 11th Bengali Chuti Question and Answer Suggestion.
ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class Eleven Bengali Chuti Suggestion
একাদশ শ্রেণীর বাংলা পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বোর্ডের (WBCHSE) সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী একাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়টির সমস্ত প্রশ্নোত্তর। সামনেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা, তার আগে winexam.in আপনার সুবিধার্থে নিয়ে এল ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class Eleven Bengali Suggestion । বাংলা বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হলে অবশ্যই পড়ুন আমাদের একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন বই ।
ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class 11th Suggestion
আমরা WBCHSE একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন | West Bengal Class 11th Suggestion আলোচনা করেছি। আপনারা যারা এবছর একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা কিছু প্রশ্ন সাজেশন আকারে দিয়েছি. এই প্রশ্নগুলি পশ্চিমবঙ্গ একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা তে আসার সম্ভাবনা খুব বেশি. তাই আমরা আশা করছি একাদশ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার সাজেশন কমন এই প্রশ্ন গুলো সমাধান করলে আপনাদের মার্কস বেশি আসার চান্স থাকবে।
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer with FREE PDF Download
Bengali Class XI, Bengali Class Eleven, WBCHSE, syllabus, একাদশ শ্রেণি বাংলা, ক্লাস ইলেভেন বাংলা, একাদশ শ্রেণিরের বাংলা, বাংলা একাদশ শ্রেণির – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একাদশ শ্রেণী – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একাদশ শ্রেণির বাংলা ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্লাস টেন ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, HS Bengali – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, Class 11th ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, Class XI ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইংলিশ, একাদশ শ্রেণির ইংলিশ, পরীক্ষা প্রস্তুতি, রেল, গ্রুপ ডি, এস এস সি, পি, এস, সি, সি এস সি, ডব্লু বি সি এস, নেট, সেট, চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতি, West Bengal Secondary Board exam Bengali Chuti suggestion, West Bengal West Bengal Class Eleven Board exam suggestion , WBCHSE , একাদশ শ্রেণির সাজেশান, একাদশ শ্রেণির সাজেশান , একাদশ শ্রেণির সাজেশান , একাদশ শ্রেণির সাজেশন, একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশান , একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশান , একাদশ শ্রেণীর বাংলা , একাদশ শ্রেণীর বাংলা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, HS Suggestion Bengali , একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF PDF,একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF PDF, একাদশ শ্রেণীর বাংলা – ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সাজেশন | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF, HS Bengali Suggestion PDF , West Bengal Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF.
ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF
এই (ছুটি (গল্প) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WB Class 11 Bengali Chuti Question and Answer PDF) পোস্টটি থেকে যদি আপনার লাভ হয় তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। আরোও বিভিন্ন স্কুল বোর্ড পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার সাজেশন, অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত ও রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (All Exam Guide Suggestion, MCQ Type, Short, Descriptive Question and answer), প্রতিদিন নতুন নতুন চাকরির খবর (Job News) জানতে এবং সমস্ত পরীক্ষার এডমিট কার্ড ডাউনলোড (All Exam Admit Card Download) করতে winexam.in ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।